মিরপুরে সমন্বিত অভিযান চিংড়িতে জেলি, মাছ পচা, রক্তপানির বরফে রাখা মাংস

রাজধানীর মিরপুর-১ কাঁচা বাজার ও মাছের বাজারে সমন্বিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে চিংড়ি মাছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেলির ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফ্রিজ ছাড়াই রক্তপানি মিশ্রিত বরফে সংরক্ষণ করে বিক্রি করা হচ্ছিল মাংস।  

 

এমন নানা অসঙ্গতি ও অনিরাপদ পদ্ধতিতে মাছ-মাংসসহ আরও নানা পণ্য বিক্রি হলেও অভিযানে কেবল সাবধান বাণী আর মুছলেকায় ছাড় পেয়েছেন এই ব্যবসায়ীরা।

আজ  দুপুরে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট (এফপিএমইউ), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এ সমন্বিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়।

 

অভিযানে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক (খাদ্যের বিশুদ্ধতা পরিবীক্ষণ ও বিচারিক কার্যক্রম বিভাগ) ড. সহদেব চন্দ্র সাহা।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ১২টায় মাছের বাজারে অভিযানে যায় সমন্বিত মোবাইল কোর্ট। সেখানে নিরাপদ মাত্রা ছাড়িয়ে গলা-পচা বোয়াল মাছ বিক্রি করতে দেখা যায়। সেগুলো জব্দ করা হয়।

 

পরে চিংড়ি মাছের একটি দোকানে দেখা যায়, বরফে আচ্ছাদিত কার্টনে ঢাকা চিংড়ি। কার্টনের ওপরে সাজানো চিংড়ি ভালো হলেও ত্রিপলে ঢাকা নিচে রাখা চিংড়ি মাছে জেলির উপস্থিতি পায় মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এজন্য দুই কার্টন চিংড়ি মাছ জব্দ করা হয়। মাছের দোকানটির মালিকের অনুপস্থিতিতে ভর্ৎসনা করা হয় উপস্থিত বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্যদের।

 

এছাড়া ফ্রেশ বিফ কাট সার্ভিস, হুমায়ুন মোল্লা গোশতো বিতান, মিনহাজ এন্টাপ্রাইজ নামক মুরগি ও গরু খাসির মাংসের দোকানের কর্মচারিদের ভর্ৎসনা করা হয়। সাবধান বাণী শোনানো হয়। দু’জনের কাছ থেকে নেওয়া হয় লিখিত মুছলেকা। জব্দ করা হয় বিপুর পরিমাণ মাংস।

 

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল স্টোর, নিউ সনিয়া জেনারেল স্টোরসহ অন্তত ১২টি দোকানে অভিযান চালানো হয়। সেখানে বিভিন্ন কোম্পানি ও পাইকারি পণ্য ক্রয় করে আনার পর নতুন করে প্যাকেজিং করা হলেও লেবেল ছাড়াই বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখতে দেখা যায়। এজন্য মালিকদের নিয়ম-কানুনের কথা শোনান নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা। ভবিষ্যতে নিয়মের ব্যত্যয় রেখে পণ্য বিক্রি করা হলে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে মর্মে শোনানো হয় সাবধান বাণী।

 

অভিযান শেষে ঢাকা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বি এম মোস্তফা কামাল বলেন, আমাদের গোয়েন্দা তথ্য ছিল মিরপুরে অগোছালো ও অনিরাপদভাবে খাদ্যপণ্যসহ মাছ-মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযানে এসে আমরা অনেক ব্যত্যয় পেয়েছি।

 

তিনি বলেন, চিংড়ি মাছে জেলি ব্যবহার হয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। খেলে যকৃত আক্রান্ত হতে পারে, ক্যান্সার হতে পারে, পেটের পীড়া হতে পারে। তাছাড়া ওজনও বেড়ে যায়, ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্থ ও প্রতারিত হন। সেগুলো আমরা জব্দ করেছি। বাজারে শিলং মাছ পেয়েছি, যা বিক্রি করা আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই মাছ পরিবেশ অধিদপ্তর সংরক্ষণ করার জন্য সারা দেশে তাগিদ দিচ্ছে।

 

মোবাইল পরিচালনার সময় কাউকে জরিমানা করতে দেখা যায়নি! এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযানের সময় অধিকাংশ দোকানে মূল মালিকের অনুপস্থিতি ছিল। তাছাড়া আজ আমরা মূলত সাবধান করেছি।

 

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক (খাদ্যের বিশুদ্ধতা পরিবীক্ষণ ও বিচারিক কার্যক্রম বিভাগ) ড. সহদেব চন্দ্র সাহা বলেন, আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। মাসে অন্তত একটা সমন্বিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। মুদি দোকানে দেখেছি লেবেল ছাড়া পণ্য বিক্রি করতে। তাদের সাবধান করছি। ঢাকা শহরে সরকার ১৩০ কোটি টাকা খরচ করে আধুনিক পশু জবাইখানা তৈরি করেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেখানে একটা মাংস ব্যবসায়ীকে আমরা নিয়ে যেতে পারিনি। এটা করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

বাজার সভাপতি কাজী রায়হান তপন বলেন, যেসব দোকানে নিয়মের ব্যত্যয় পাওয়া গেছে মোবাইল কোর্ট সেখান থেকে মালামাল জব্দ করেছে, ভর্ৎসনা করেছে। আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসবো। সচেতনতায় ট্রেনিং, নিয়ম-কানুন জানাবো। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

সূএ:ঢাকা পোস্ট ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ছাত্রদল-যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের যুব সমাবেশ শুরু

» শুধু শাস্তি দিয়ে দুর্নীতি পুরোপুরি নির্মূল সম্ভব নয় : দুদক চেয়ারম্যান

» ইজিবাইকে ট্রাকচাপায় তিনজন নিহত

» কাঁদলেন ছাগলকাণ্ডের মতিউর, ধৈর্যধারণ করতে বললেন আদালত

» জিয়াকে হত্যায় শেখ হাসিনার হাত নেই, তা নিশ্চিত বলা যায় না: গয়েশ্বর

» যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ১৫ শতাংশে আনার চেষ্টা করছি : বাণিজ্য উপদেষ্টা

» হুমকি-ধামকি দিচ্ছে মাইলস্টোন প্রশাসন, অভিযোগ নিহতদের পরিবারের

» সত্যিই কি বিয়ে করতে চলেছেন রোনালদো? জর্জিনার নতুন পোস্ট ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে

» মাদকসহ আটক

» সারজিস আলমের বিরুদ্ধে গাজীপুর সিএমএম কোর্টে মামলা দায়ের

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

মিরপুরে সমন্বিত অভিযান চিংড়িতে জেলি, মাছ পচা, রক্তপানির বরফে রাখা মাংস

রাজধানীর মিরপুর-১ কাঁচা বাজার ও মাছের বাজারে সমন্বিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে চিংড়ি মাছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেলির ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফ্রিজ ছাড়াই রক্তপানি মিশ্রিত বরফে সংরক্ষণ করে বিক্রি করা হচ্ছিল মাংস।  

 

এমন নানা অসঙ্গতি ও অনিরাপদ পদ্ধতিতে মাছ-মাংসসহ আরও নানা পণ্য বিক্রি হলেও অভিযানে কেবল সাবধান বাণী আর মুছলেকায় ছাড় পেয়েছেন এই ব্যবসায়ীরা।

আজ  দুপুরে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট (এফপিএমইউ), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এ সমন্বিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়।

 

অভিযানে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক (খাদ্যের বিশুদ্ধতা পরিবীক্ষণ ও বিচারিক কার্যক্রম বিভাগ) ড. সহদেব চন্দ্র সাহা।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ১২টায় মাছের বাজারে অভিযানে যায় সমন্বিত মোবাইল কোর্ট। সেখানে নিরাপদ মাত্রা ছাড়িয়ে গলা-পচা বোয়াল মাছ বিক্রি করতে দেখা যায়। সেগুলো জব্দ করা হয়।

 

পরে চিংড়ি মাছের একটি দোকানে দেখা যায়, বরফে আচ্ছাদিত কার্টনে ঢাকা চিংড়ি। কার্টনের ওপরে সাজানো চিংড়ি ভালো হলেও ত্রিপলে ঢাকা নিচে রাখা চিংড়ি মাছে জেলির উপস্থিতি পায় মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এজন্য দুই কার্টন চিংড়ি মাছ জব্দ করা হয়। মাছের দোকানটির মালিকের অনুপস্থিতিতে ভর্ৎসনা করা হয় উপস্থিত বাজার পরিচালনা কমিটির সদস্যদের।

 

এছাড়া ফ্রেশ বিফ কাট সার্ভিস, হুমায়ুন মোল্লা গোশতো বিতান, মিনহাজ এন্টাপ্রাইজ নামক মুরগি ও গরু খাসির মাংসের দোকানের কর্মচারিদের ভর্ৎসনা করা হয়। সাবধান বাণী শোনানো হয়। দু’জনের কাছ থেকে নেওয়া হয় লিখিত মুছলেকা। জব্দ করা হয় বিপুর পরিমাণ মাংস।

 

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল স্টোর, নিউ সনিয়া জেনারেল স্টোরসহ অন্তত ১২টি দোকানে অভিযান চালানো হয়। সেখানে বিভিন্ন কোম্পানি ও পাইকারি পণ্য ক্রয় করে আনার পর নতুন করে প্যাকেজিং করা হলেও লেবেল ছাড়াই বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখতে দেখা যায়। এজন্য মালিকদের নিয়ম-কানুনের কথা শোনান নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা। ভবিষ্যতে নিয়মের ব্যত্যয় রেখে পণ্য বিক্রি করা হলে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে মর্মে শোনানো হয় সাবধান বাণী।

 

অভিযান শেষে ঢাকা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বি এম মোস্তফা কামাল বলেন, আমাদের গোয়েন্দা তথ্য ছিল মিরপুরে অগোছালো ও অনিরাপদভাবে খাদ্যপণ্যসহ মাছ-মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযানে এসে আমরা অনেক ব্যত্যয় পেয়েছি।

 

তিনি বলেন, চিংড়ি মাছে জেলি ব্যবহার হয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। খেলে যকৃত আক্রান্ত হতে পারে, ক্যান্সার হতে পারে, পেটের পীড়া হতে পারে। তাছাড়া ওজনও বেড়ে যায়, ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্থ ও প্রতারিত হন। সেগুলো আমরা জব্দ করেছি। বাজারে শিলং মাছ পেয়েছি, যা বিক্রি করা আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই মাছ পরিবেশ অধিদপ্তর সংরক্ষণ করার জন্য সারা দেশে তাগিদ দিচ্ছে।

 

মোবাইল পরিচালনার সময় কাউকে জরিমানা করতে দেখা যায়নি! এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযানের সময় অধিকাংশ দোকানে মূল মালিকের অনুপস্থিতি ছিল। তাছাড়া আজ আমরা মূলত সাবধান করেছি।

 

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক (খাদ্যের বিশুদ্ধতা পরিবীক্ষণ ও বিচারিক কার্যক্রম বিভাগ) ড. সহদেব চন্দ্র সাহা বলেন, আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। মাসে অন্তত একটা সমন্বিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। মুদি দোকানে দেখেছি লেবেল ছাড়া পণ্য বিক্রি করতে। তাদের সাবধান করছি। ঢাকা শহরে সরকার ১৩০ কোটি টাকা খরচ করে আধুনিক পশু জবাইখানা তৈরি করেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেখানে একটা মাংস ব্যবসায়ীকে আমরা নিয়ে যেতে পারিনি। এটা করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

বাজার সভাপতি কাজী রায়হান তপন বলেন, যেসব দোকানে নিয়মের ব্যত্যয় পাওয়া গেছে মোবাইল কোর্ট সেখান থেকে মালামাল জব্দ করেছে, ভর্ৎসনা করেছে। আমরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসবো। সচেতনতায় ট্রেনিং, নিয়ম-কানুন জানাবো। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

সূএ:ঢাকা পোস্ট ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com